বিপিএলকে পচাচ্ছেন রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক

- আপডেটের সময়: ১১:৫৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
- / ২৬ সময় দেখুন

চলতি আসরের পুরো বিপিএলের মর্যাদা নষ্ট আগেই করেছেন দুর্বার রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক। এখন তিনি যা করছেন, তাতে দেশে তো বটেই, বিদেশেও ক্রমশ পচে যাচ্ছে বিপিএলের মান-সম্মান। আজ দিচ্ছি-কাল দিচ্ছি বলে প্রতিদিনই তিনি ক্রিকেটারদের টাকার জন্য ঘোরান। ক্রিকেটাররা মাঠে না যাওয়ার হুমকি দিলে তিনি তাদের হাতে চেক ধরিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। সেই চেক হাতে নিয়ে ক্রিকেটাররা আনন্দে সেলফি তোলেন। সেই ছবি ফেসবুকে পোস্টও করেন। কিন্তু সেই চেক ব্যাংকে ক্যাশ করতে দেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে চেক বাউন্স! ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের অ্যাকাউন্টে টাকাই নেই! একবার নয়, বেশ কবার এমন চেক বাউন্স বা জালিয়াতি করেছেন দুর্বার রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্চাইজি শফিকুর রহমান। সর্বশেষ তার সেই দুই নম্বরির শিকার হয়েছেন ক্রিকেটাররা গত মঙ্গলবার।
টাকা না পেয়ে রাজশাহীর বিদেশিরা একটি ম্যাচে হোটেলে থেকেও বের হননি। ম্যাচটি তারা বয়কট করেন। কোনো বিদেশি ছাড়াই বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সেই ম্যাচ খেলতে হয় রাজশাহীকে। ক্রিকেটারদের এহেন বকেয়ায় ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন (ফিকা) বিপিএলের তীব্র সমালোচনা করেছে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের মর্যাদায় কালি ছিটিয়েছে এবার দুর্বার রাজশাহীর এই ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক। এদের বিরুদ্ধে বিসিবিও এতই বীতশ্রদ্ধ যে, তারা এই ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের বিরুদ্ধে এখন আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথাও জানিয়েছে।
তবে সৌভাগ্যের বিষয় হলো, মাঠের বাইরের এমন বাজে পরিস্থিতির শিকার হলেও রাজশাহীর ক্রিকেটাররা মাঠের ক্রিকেটে হৃদয় উজাড় করে খেলছেন।
শেষ চার ম্যাচের তিনটিতে জিতে প্লে-অফের আশা অনেকটা বাঁচিয়ে রেখেছে দলটি। মাঠের এমন দারুণ পারফরম্যান্সের পরও ঠিকঠাক পারিশ্রমিকটা পাচ্ছেন না দলটির ক্রিকেটাররা। চট্টগ্রাম পর্বে যেমন রাজশাহীর পারিশ্রমিক নিয়ে হয়েছে ঝামেলা, ঢাকাতেও ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। গতকাল ফের বাউন্স হয়েছে চেক। অর্থাৎ, দ্বিতীয় কিস্তিতে পারিশ্রমিকের আরও যে ২৫ শতাংশ পাওয়ার কথা ছিল ক্রিকেটারদের, সেটা তারা পাননি। দেশি ক্রিকেটারদের মতো বিদেশিরাও ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পেয়েছেন। পাশাপাশি বাকি পড়া ১৮-১৯ দিনের দৈনিক ভাতাও পাননি দলটির কোনো ক্রিকেটার।
রোববার রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের হাতে ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিকের চেক বুঝিয়ে দিয়ে শুধু দেশিদের নিয়ে ম্যাচ খেলে রাজশাহী। পরদিন, অর্থাৎ সোমবার মোহাম্মদ হারিস ছাড়া দলটির বাকি পাঁচ বিদেশি ক্রিকেটার পারিশ্রমিকের চেক হাতে পেয়ে মাঠে এসেছিলেন এবং ম্যাচও খেলেন। লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে রাজশাহী দারুণ দাপটে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে হারায়। তবে দলটি মাঠে যেমন পারফরম্যান্স করছে, তাতে পারিশ্রমিকের পাশাপাশি বোনাসের দাবিও রাখতে পারতেন ক্রিকেটাররা। অথচ পারিশ্রমিকটা ঠিকঠাক পাবেন কি না, সেটা নিয়ে সন্দিহান দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। দলটির মালিক শফিক রহমানের গাফিলতিতে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বারবারই আটকে যাচ্ছে। কারণ, চেক দিলেও বারবার বাউন্স হচ্ছে।
কেন দলটি পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে পারছে নাÑ সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে আমার দেশ। দুর্বার রাজশাহীর পারিশ্রমিক ইস্যুতে কাজ করা বিসিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক জানান, দুর্বার রাজশাহীর বর্তমান মালিকের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তারা যখন দল নিয়েছিল, তখন আরো দুজনকে সঙ্গে নিয়ে কনসোর্টিয়াম গঠন করে। পরে শফিক রহমানের কারণে কনসোর্টিয়াম ভেঙে যায় এবং দল শফিক রহমানের একার হয়ে যায়। তার ওই দল চালানোর কোনো সামর্থ্য নেই। তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম পর্বে কনসোর্টিয়ামের বাকি দুজন ফিরতে চাইলেও শফিক তাদের ফিরতে দেননি। ওই কনসোর্টিয়াম থাকলে রাজশাহীর এ সমস্যা তৈরি হতো না। পাশাপাশি দলটির স্পনসরের টাকা কোথায় গেল, সে প্রশ্নও ছুড়ে দেন বিসিবির ওই পরিচালক।
তিনি আমার দেশকে আরও জানান, আমার জানামতে দুর্বার রাজশাহী স্পনসরের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ নিয়েছে। ওটা দিয়ে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধের পর মালিকের অনেকটা থেকে যেত। কনসোর্টিয়াম থাকলে তো তাদের খরচ অনেক কমে যেত। এমনকি ডিএও (দৈনিক ভাতা) ঠিকঠাক দিতে পারত।
সবশেষ চার ম্যাচের তিনটিতে জয় পাওয়া রাজশাহী এতদিন মূলত খেলেছে পারিশ্রমিক পাবেÑ এমন আশায়। তবে লিগ পর্ব শেষ হলেও এখন পর্যন্ত তারা পেয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক। অথচ এ সময়ের মধ্যে তাদের ৭৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা ছিল। পারিশ্রমিক বকেয়া থাকার প্রভাবটা মাঠে পড়তে দেয়নি দলটির ক্রিকেটাররা। উড়তে থাকা রংপুর রাইডার্সকে টানা দুই ম্যাচে হারায় তারা। এমন কঠিন সময়ে মাঠে পাওয়া দারুণ জয়ে উজ্জীবিত থাকার কথা ছিল দলটির। অথচ প্রাপ্য পারিশ্রমিক না পেয়ে সেই ক্রিকেটাররাই এখন মনমরা। মাঠের আনন্দ যেন মিলিয়ে যাচ্ছে টিম হোটেলে পা রাখতেই ।