ওয়াজের কারণে হত্যা ও সন্ত্রাসবিরোধী মামলা

- আপডেটের সময়: ১১:৩১:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৩ সময় দেখুন

মসজিদের খতিব থেকে ওয়াজ মাহফিলের বক্তাদের কণ্ঠ নিয়ন্ত্রণ আর হয়রানি ও নির্যাতন ছিল পতিত আওয়ামী সরকারের অন্যতম কৌশল। শুধু খুতবা আর ওয়াজের কারণে গ্রেপ্তার-নির্যাতনের শিকার হন দেশের অন্যতম ধর্মীয় আলোচক ও খতিব হাফেজ মাওলানা মীর্জা ইয়াসিন আরাফাত। ধর্মচর্চার নামে বিকৃতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছিল হত্যা মামলা।
আর ওয়াজ মাহফিলে সরকারের অপছন্দের কিছু কথা বলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ দুই মাস তাকে কাটাতে হয় জেলে। জজ কোর্টে জামিনের আবেদনে মেলেনি জামিন। হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পরও কাগজ আটকে মুক্তিতে বিলম্ব করা হয়। মাহফিল বন্ধ বা দাওয়াত বাতিলের ঘটনাও ঘটেছে অনেক।
এসব নির্যাতন ও নিপীড়ন প্রসঙ্গে মাওলানা মীর্জা ইয়াসীন আরাফাত আমার দেশকে বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে সাড়ে ১৫ বছরে দেশের অধিকাংশ বিরোধী মতের মানুষ, যারা রাজপথে মাঠে-ময়দানে কথা বলেছেন অথবা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের সুযোগমতো নানা প্রক্রিয়ায় নির্যাতন করা হয়েছে। কখনো মামলা দিয়ে, কখনো হুমকি অথবা গ্রেপ্তার ও জেলে নিয়ে এই নির্যাতন করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলেম-ওলামা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
মাওলানা ইয়াসীন আরাফাত বলেন, প্রতিটি মাহফিলেই ইনসাফের কথা, জালিমের জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন তিনি। ২০২২ সালে ফরিদপুরের কানাইপুরে একটি মাহফিলে প্রধান আলোচক ছিলেন আবু ত্বহা আদনান। বিশেষ অতিথি ছিলেন তিনি। সেই মাহফিলে বাধা দেয় আওয়ামী সরকারের লোকরা।
সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘কোনোভাবেই একটি রাষ্ট্র পুলিশের ভয় দেখিয়ে, আইনশৃঙ্খলার ভয় দেখিয়ে এবং রাষ্ট্রযন্ত্র যেভাবে মানুষের ওপর চেপে বসেছে- এভাবে কখনো কোনো মানুষকে কন্ট্রোল করা যায় না, যদি আল্লাহর ভয় মানুষের অন্তরে না থাকে। আল্লাহর ভয় থাকলে মানুষ বিভিন্ন অপরাধ থেকে বেঁচে থাকে। কিন্তু পুলিশ, র্যাব ও আইনের ভয় দেখিয়ে মানুষকে কন্ট্রোল করা যায় না। তাই আমি সরকারের প্রতি আবেদন করব- তিনি যেন ওয়াজ মাহফিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করেন, অনুমতির প্রয়োজন যেন না হয়।’
এই বক্তব্যের পরই ফরিদপুর সদর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মাওলানা ইয়াসীন আরাফাতের নামে মামলা করে পুলিশ। এরপরই বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতেও তিনি কিছু মাহফিল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তারপর হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের একটি জামিন আদেশ পান তিনি।
একই সঙ্গে ফরিদপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করার কথা বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৪ মার্চ ফরিদপুর আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে গ্রেপ্তারের আদেশ দেওয়া হয়। সেই আদেশ অনুযায়ী তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগেও মামলা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। কিন্তু তাতে কারাগারে যেতে হয়নি। সেবারই প্রথম কারাগারে যান তিনি। কারাগারে নেওয়ার আগে আদালতের গারদে রাখা হয়েছিল মীর্জা ইয়াসীন আরাফাতকে। সেখানে তেমন পরিবেশ না থাকলেও নামাজ পড়ে কিছু খাবার খান তিনি। কারাগারে নেওয়ার প্রস্তুতিকালে পুলিশের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে যায়।
কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, তার গ্রেপ্তারের খবরটি ফেসবুকে প্রচার হয়ে যাওয়ায় মিছিল-মিটিংয়ের আশঙ্কা করছিলেন তারা। এ জন্য ঢাকা থেকে তাকে সতর্কতার সঙ্গে দ্রুত কারাগারে পাঠাতে বলা হয়। একপর্যায়ে প্রিজনভ্যানে তুলে ফরিদপুর কারাগারে নেওয়া হয় তাকে। সম্পূর্ণ বিনা কারণে মামলা ও কারাভোগ করতে হয় এই আলেমকে।
কারাগারে থাকা অবস্থায় জামিনের জন্য জজ কোর্টে তিন দফায় আবেদন ও শুনানি করলেও জামিন দেওয়া হয়নি। এমনকি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার পরও মুক্তি পেতে ১৭ দিন অপেক্ষা করতে হয় তাকে। কারণ জামিন আদেশের পরও তার কাগজ দেওয়া হচ্ছিল না। কারণ বিচারপতি মানিকের একটি শ্বেতপত্রে তার নাম ঢোকানো হয়েছিল।
এ জন্য জামিনের কাগজ দিতে গড়িমসি করা হয়। অনেক দেনদরবার করে সেই কাগজ নিতে হয় তাকে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তারদের কোনোভাবেই যেন জামিন না দেওয়া হয়, সে জন্য ওপর থেকে নির্দেশনা ছিল তিনি জানতে পারেন। বিশেষ করে জেলা কোর্টগুলোকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এটার শিকার তিনিসহ সব আলেম।